৯ মে ২০০৯ ঘূর্ণিঝড় আইলার ফলে বাংলাদেশের সুন্দরবন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আইলার ফলে বাড়ি হারিয়েছে ২.৩ মিলিয়ন মানুষ, ২৩৭ জন মারা গেছে এবং অনেক গৃহপালিত পশু পাখি পানিতে ভেসে গেছে (ঝঁষঃধহধ ধহফ গধষষরপশ ২০১৫)। চাষের জমি, ভেড়ি -বাঁধ ও মাছের ঘেরের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়েছে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি মুন্ডা সম্প্রদায়ের মত সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল বনজীবিদের স¦াভাবিক জীবনযাত্রায় মারাতœক সংকট সৃষ্টি করছে, তাথাপি বলা যায় এটি তাদের জন্য এক নতুন সমভাবনার দ¦ার খুলে দিয়েছে। আমার মতে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা যেভাবে বন্যা, সমুদ্রের ঢেউ ,জলবায়ু এবং অন্যান্য দুর্যোগকে মোকাবেলা করে আসছে ,তাদের সেই শক্তি দিয়েই তারা আবার আইলা পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছে।
ব্রিটিশ শাসনআমল (১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭) থেকে সুন্দরবনের সাথে মুন্ডা সম্প্রদায়ের জীবন-জিবিকার যে নিবিড় সম্পর্ক তা ঘূর্ণিঝড় আইলার ফলে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সুন্দরবন একটি উপক‚লীয় বন এবং এর সাথে অনেকগুলা নদীর ( যেমন- খোলপেটুয়া, ধোজিখালী) সংযোগ রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে,জানা যায় যে মুন্ডারা ব্রিটিশ শাসক ও স্থানীয় বাঙালি জমিদার উভয়ের অর্থনৈতিক লাভের স্বার্থে ও কৃষির বি¯তারের জন্য সুন্দরবন পরিষ্কারের কাজ করতো। মুন্ডাদের ভিতর শ্রম বন্টন ব্যব¯থার মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকরা বনের ভিতরে লবনের কারখানা স্থাপন করেছিল।সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ধোজি খালী নদীর পানি লবন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এর ধবংসাবশেষ বিদ্যমান।
The cyclone Aila that occurred on 9 May 2009 imperiled a large tract of the Bangladesh Sundarbans forest. 2.3 million people lost their houses, 237 died and the waters washed away livestock (Sultana and Mallick 2015). Cultivable lands, embankments and fishing ponds were severely damaged. The disaster devastated the livelihoods of the south-west coastal communities of Bangladesh. Although it displaced the forest dependent communities like the Munda adivasi community and producing a severe livelihood crisis, it also opened new opportunities for them. In exploring their resilience to Aila, I suggest that their capacity to fight against floods, tidal waves and other disasters for generations, has enabled them to cope.
Let me begin by showing how the cyclone changed the relationships that the Mundas had with the Sundarbans forest since the British colonial administration (1757 to 1947). The Sundarbans is a mangrove forest and waterbody adjoining numerous rivers (such as, Khalpetuaya, Dhojikhali). Historically, the Mundas cleared the Sundarbans forest land for expanding agriculture in ways that promoted the economic interest of both British colonial administrators and local Bengali landlords. Utilising the labour of the Mundas, the colonial administrators established a salt industry inside the forest, relics of which still remain. The Dhojikhali river waters flowing through the Sundarbans were utilised to produce salt. Unattended by the Bangladeshi state in recent decades, the salt industry has now ceased to exist.
২০০৯ এ আইলার পর থেকে অদ্যবধি সুন্দরবনে ঢোকার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অধিক পরিমানে উৎকোচ দিতে হচ্ছে । অন্যদিকে আইলার পরে সুন্দরবনের গাছ, কাঠ, গুড়ি, মধু ও বন্য প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে। আইলার সময়ে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কমানোর জন্য বন বিভাগ বনের উন্নয়নে কোন কর্মসূচী গ্রহন করেনি। আইলার পর থেকে বনে প্রাকৃতিক সম্পদ কমে য্ওায়ায় মধুসংগ্রহকারী মুন্ডাদের এখন অনেক বেশি উৎকোচ দিতে হচ্ছে বিশেষকরে মধু ্্্আরহনের সময় যা শুরু হয় এপ্রিল মাসে এবং শেষ হয় মে মাসে। বাকি দশ মাস তারা বন সংলগ্ন জলাশয় থেকে কাঁকড়া, বাগদা চিংড়ি ও গলদা চিংড়ি শিকার করে, এর জন্যও তাদেরকে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও বনদস্যু উভয়কেই ঘুষ দিতে হয়।
কালিঞ্চির মুন্ডাদের ভাষ্যমতে, আইলার পূর্বে কালিঞ্চিতে কাঁকড়া মোটাতাজাকরনের কোন কার্যক্রম ছিল না। ধোজিখালী নদী থেকে ধরা কাঁকড়া স্থানীয় ভেটখালী বাজারে বিক্রি করা হত। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, আইলার পরে কাকড়ার প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন সংলগ্ন নদী ও খালগুলোতে প্রচুর কাঁকড়া প্ওায়া যাচ্ছে। মুন্ডারা ধোজিখালী নদী ও খালগুলো থেকে কাঁকড়া ধরে বাড়িতে নিয়ে যায়। ২০১১ ও ২০১২ সালে পিকেএসএফ, সুশীলন (একটি জাতীয় বেসরকারী সংস্থা) এবং স্যামস ( সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থা) একত্রে মুন্ডা নারীদের বসতবাড়ির পুকুরে কাঁকড়া মোটাতাজাকরনের ব্যাপারে প্রশিক্ষন দেয় ,সাথে ১৫০০০ টাকা করে শর্তহীনভাবে নগদ অনুদান দেয় পুকুরের কাঁকড়া পালনের জন্য । স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে জন্য ২০১৫ সালে কালিঞ্চিতে একটি কাঁকড়া হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আইলার পর থেকে মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কাঁকড়া শিল্পের প্রতি আগ্রহ তৈরী হচ্ছে। আর মুন্ডা নারীরা তাদের বসতবাড়ির নোনা পানির পুকুরকে কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খাল থেকে ধরা কাঁকড়া প্রথমে হ্যাচারীতে বিক্রি করা হয়, তারপর জেলা শহর সাতক্ষীরাতে যায়। মোটাতাজাকৃত কাঁকড়াগুলো স্থানীয় হ্যাচারীর প্রতিনিধিরা কেনে এবং বিদেশে রপ্তানীকরণের পূর্বে এগুলো পুনরায় ঢাকায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই শিল্পের সাথে জড়িত একজন মুন্ডা বলেন, বড় কাঁকড়ার চাহিদা বিশেষ করে চায়না, হংকং ও সিঙ্গাপুরের আর্ন্তজাতিক বাজারে বেশী।
Since the Aila cyclone in 2009, the rates of bribery that forest officials demand from the Mundas for access to the Sundarbans have increased. There has also been a decline in the forest trees, fuel wood, timber, honey and wild animals inside the Sundarbans. No reforestation initiative was taken by the Forest Department to mitigate the loss of resources inside the forest during Aila. Due to scarcity of the forest resources since Aila, the Mundas are now required to pay higher bribes, in particular, for harvesting honey, which annually begins in April and ends in May. In the remaining ten months, they catch crabs, shrimps and lobsters in the waterways inside the forest. For this too, they need to bribe both local forest officials and the rangers inside the forest.
According to my respondents, before Aila, there was no crab fattening activity in Kalinchi. Crabs caught from the Dhojakhali river were sold at the local market of Vetkhali. They reported that after Aila, crabs have become abundantly available in the river and canals adjacent to the forest. Munda householders catch crabs from the Dhojakhai and the canals are brought to the homestead. In 2011 and 2012, the Palli Karma Sahayak Foundation (PKSF) along with Shushilan (a national NGO) and SAMS (Sundarbans Adivasi Munda Sangasta) trained Munda women for crab fattening at their homestead ponds with a non-conditional cash grant of Taka (TK) 15,000 to develop their ponds for crab farming. In 2015, a crab hatchery was established in Kalinchi for processing crabs for the domestic and international markets. Since Aila, there has been a growing interest in building the crab industry within the Munda community. Munda women in particular have been involved in farming the saline water ponds of their homesteads. Crabs caught from the Sundarbans forest surrounding rivers and canals are sold at the hatchery first, afterwards it goes to the district town, Satkhira. The fattened carbs are purchased by the agents of local hatcheries, which are further processed in Dhaka city before exporting abroad. As reported by a Munda respondent involved in this industry, large-sized crabs are in demand in the international food markets of China, Hong Kong and Singapore.
গবেষনা থেকে দেখা যায় যে, বিদেশে রপ্তানির জন্য ব্যক্তিগত ভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবিক শ্রম ধ্বংস করছে (ঝঁৎ ২০১১)। অনুরূপভাবে, ২০১৩ সালে আমার গবেষনায় অংশগ্রহনকারীরা মতামত দিয়েছেন যে, ঐতিহাসিকভাবে ঘেরের (অনানুষ্ঠানিক লোনা পানির মাছের পুকুর) উন্নয়ন নি¤œবিত্তের আয়কে ব্যাপক ভাবে কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে মুন্ডা মহিলারা যারা এই গবেষনায় অংশগ্রহণ করেছে তারা তাদের বাড়িতে পুকুরে কাঁকড়া চাষে প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে।
যদিও কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ আইলা পরবর্তী জীবনধারার একটি নতুন রূপ, এটা মুন্ডাদের জন্য বিকল্প এক জীবনধারা যা তাদের সুন্দরবনের উপর নির্ভরতশীলতা কমাতে সাহায্য করেছে। কাঁকড়া চাষের সাথে জড়িতরা কাঁকড়া চাষের জন্য নতুন বিধিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। বন বিভাগ সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা হচ্ছে তারা নতুন কোন আইন প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করেনা যাতে ¯থানীয় কাঁকড়া শিকারিদের কোন উপকার হয়। একজন মুন্ডানারী বলেন, ‘কাঁকড়া সংগ্রহের জন্য বিদ্যমান আইনগুলো পুন:বিবেচনা করলে ভালো হয়। কাঁকড়া বংশবৃদ্ধির ধাপটিও মনে রাখা প্রয়োজন। এতে নদীতে অধিক কাঁকড়া জন্মাবে এবং তাতে স্থানীয় বাসিন্দারা অধিক লাভ করতে পারবে।’
আইলা পরবর্তী সময়ে বাড়ির আক্সিগনায় কাকড়া চাষ নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। মাধ্যমে আইলাকে প্রতিহত করেছে। কাঁকড়া আরোহনের জন্য জন্য মুন্ডারা যে সকল আইনী ও রাজনৈতিক বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে তা তাদের জীবনকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। আইলা পরবর্তীতে কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুন্ডা মহিলারা মনে করেন কাঁকড়া চাষ লাভজনক। মুন্ডা মহিলাদের জীবনযাত্রার স্বভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটা নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
Scholars argue that shrimp cultivation in southwest Bangladesh for international exports devastates landscapes and labor (Sur 2011). Likewise, the participants of my previous studies in 2013 opined that historically the development of ghar (informal saline water fishing pond) has significantly reduced the earning of the poor peoples’ livelihood. In contrast, the Munda women, who took part in this study showed their deep enthusiasm for the development of home-based crab farming in their own ponds. Despite crab fattening emerging as a new form of post-Aila livelihood, it has created an alternative livelihood. This has reduced their dependency on the Sundarbans forest and on corrupt forest officials. The community engaged in crab farming and their NGO supporters are demanding that Bangladesh should introduce new regulations for crab culture. One of the major problems is that the Forest Department does not develop and implement laws that support the need of local residents, for whom crabs catching is often the sole means for livelihood. According to one villager, ‘it would be better to revise the current laws governing the crab collection. It also requires keeping in mind about the reproduction phase of the crab. This will allow crabs to grow more in the river so that residents can get more benefits out of it’.
As the example of crab catching suggests, the Mundas have responded to the Aila disaster by building new forms of livelihood. The legal and political challenges that they face to legalise crab catching which continues to make their lives unstable. The post-Aila period has ensured on-going salinity intrusion on farming land. Munda women perceive crab cultivation to be profitable. It has also opened up a new room for the Munda women to build their economic capacities for livelihood resilience.
References:
Ritter E, Dauksta D 2013 Human–forest relationships: ancient values in modern perspectives. Env. Dev. and Sus 15(3): 645-662.
Sultana, Z & Mallick, B 2015, ‘Adaptation Strategies After Cyclone in Southwest Coastal Bangladesh-Pro Poor Policy Choices’, American Journal of Rural Development, vol.3, no. 2, pp. 24-33.
Sur, M 2009, ‘Chronicles of Repression and Resilience’, in Hossain, H, Guhathakurta, M and Sur, M (ed.), Freedom from Fear, Freedom from Want? Re-thinking Security in Bangladesh, Delhi, pp. 47-64.
Disclaimer: The non-English content in this blog is a translated version of the English content provided either by the authors of the article or by the translators assigned by respective authors. Issues journal shall not be responsible for any inaccuracies or errors, both direct and indirect, in the translation. If any questions arise concerning the accuracy of the information presented by the translated version, please refer to the English content of the same.