ছাদ থেকে দেখা দৃশ্যঃ দক্ষিন এশিয়ার জায়গা এবং রাজনীতি
এই লিখাটি দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে বাড়ির ছাদ যে বস্তুগত গুরুত্ব বহন করেছে, সেই বিষয়টিকে সামনে আনার চেষ্টা করেছে। প্রাত্যাহিক জীবনে মানুষের প্রতিদিনের যে জায়গা ব্যাবহার প্রয়োজন, সেইটাকে কেন্দ্র করে বাড়ির ছাদ রাষ্ট্র এবং নাগরিককে মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়ার বহুমূখী সম্ভাবনা রাখে। সমস্ত বাড়িরই ছাদ আছে। এইটা স্থাপনার প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবেই আছে, কিন্তু কাজের জায়গা হিসেবে ছাদের যে রাজনৈতিক গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিলো সেইটা করা হয় নি । এমনকি পরিকল্পনা এবং স্থাপনা র্নিমানের সময়ও বেশির ভাগ সময়ই বাড়ির ছাদকে অবহেলা করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার নগর পরিকল্পনাকারী বা স্থপতিরা বাড়ির ছাদকে বেশির ভাগ সময়ই “উচ্ছিষ্ট” বা “বাতিল জায়গা” হিসেবেই বিবেচনা করেছে, যে কারনে পরিকল্পনা এবং নকশায় বাড়ির ছাদকে খালি জায়গা হিসেবেই দেখানো হয় (Dibazar 2015)। অতি বড়লোকের জন্য আকাশচুম্বী বহুতল ভবন আর বাদবাকি সবার জন্য কম খরচের বহুতল টাওয়ার এর যুগে, বাড়ির ছাদ পুঁজির সীমানা অতিক্রম করার সম্ভাবনা তৈরী করে। নিউয়র্ক এবং দুবাই এর মতো জায়গার বড়লোক এবং অভিজাত সম্প্রদায় এখন বাড়ির ছাদের জায়গা ব্যাবহারের করে বিশ্রাম কেন্দ্র, রেস্তরা, বার, ইনফিনিটি পুল এবং বাগান করার জন্য বর্ধিত পরিকল্পনা রাখে।যাই হোক যে সমস্ত বাড়ির মালিক, বিল্ডার্স বা বিনিয়োগকারী বাড়ির প্রত্যেকটা ইঞ্চি থেকে অর্থ উর্পাজন করতে চেয়েছে, ঐতিহাসিকভাবেই তাদের কাছে ছাদের জায়গার সঠিক মূল্যায়ন কখনো ছিলো না। এই বাতিল জায়গাটাকে তারাই ব্যাবহারিক কাজে রুপান্তরিত করেছে, যারা ছাদ বাড়িকে বাসস্থানের পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মূল্য বোধের উৎস হিসেবে দেখেছে। কায়রো থেকে রিও-ডি-জেনেরিও পর্যন্ত বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র বা এপ্যার্টমেন্টে ছাদ কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া বহুবিধ কাজে ব্যাবহৃত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ঐতিহ্যগতভাবেই বাড়ির ছাদ মানেপুরানো দিনের স্মৃতি, প্রেম ভালোবাসার অনুভূতি অথবা কাজ বা অবসরের বিনোদন। বলিউডের অনেক বিখ্যাত গান আছে এই বাড়ির ছাদ নিয়ে। বাড়ির ছাদ হচ্ছে দক্ষিন এশিয়ার গ্রাম বা শহরের প্র্যাত্যাহিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । বাড়ির ছাদ হচ্ছে গরম কালের অলস দুপুর, রাতের বেলা চারপায়াতে আয়েস করা, গোপন প্রেম, উচু গলায় হেসে উঠা কিংবা পরিবার, বন্ধু অথবা প্রতিবেশি সবার সাথে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠা। এখাানে ছাদবাড়ি মানে উচু গলায় তর্ক করা, ধূমপান বিরতি, রোদে চুল শুকানো, একটা কিছু নিয়ে ছুটোছুটি দৌড়াদৌড়ি, খবর বা খাবার দেয়া নেয়া করা অথবা কোলাহল থেকে পালিয়ে যাওয়া । ছাদ বাড়ি মানে রোদে কাপড় শুকানো, খড়, ফল বা মসলা শুকানো, ছাগল বা মুরগির মাচা, বাড়ির শরীর চর্চা কেন্দ্র, পাখি দেখা, ঘুড়ি উড়ানো, বানর ঘুরে বেরানো কিংবা বিয়ের মেহেদী অনুষ্ঠান, রেডিও শোনা, বিদ্যুত চলে গেলে ছাদে আড্ডা দেয়া কিংবা ঠিকঠাক মোবাইলে সিগনাল পাওয়া ।
This essay focuses on rooftops in South Asia to explore the materiality of politics. Rooftops contain a multitude of possibilities, from the mundane and everyday use of space to spectacular political encounters between people and the state. All buildings have roofs, a necessary structural feature, but roofs are a site that has escaped scholarly attention in work on politics and space. Roofs are also often ignored in the design and construction processes. Urban architects and planners have largely treated the rooftop as “leftover” or “wasted space”, appearing as blank spaces in plans and models (Dibazar 2015). In the age of mega skyscrapers for the super-rich and low-cost high-rise towers for everyone else, rooftops signal a frontier for capital to overcome. Elite and hyper-gentrified spaces in New York and Dubai now include elaborate designs for rooftop leisure and consumption–restaurants, bars, infinity pools and gardens. However, rooftops historically offered little economic value for those seeking to make money out of every inch of space: builders, investors and owners. This wasted space is transformed by those who live and dwell in buildings to a source of social, economic and even political value. From Cairo to Rio de Janeiro, the rooftop of houses, apartment and offices are invested with meanings that were never intended for them and serve multiple functions (Fikry 2020; Roggema 2017).
In South Asia, rooftops traditionally evoke images of bygone eras, feelings of romance and love, and memories of leisure and work. Some of the most iconic Bollywood songs have featured rooftops. They are an integral part of everyday life and activities in South Asia’s villages and cities. Rooftops are about: lazy summer afternoons and nights on charpoy [rope bed] / secret romances / loudly laughing, gossiping and bantering with family, friends and neighbours / loud fights and hushed arguments / cigarette breaks / drying your hair/ running, chasing and clambering across things / sharing of messages and snacks / escaping the cacophony / laundry / drying out grains, herbs and fruits / tethering your goats and keeping the chickens / bird-watching / kite-flying / monkeys / mehndis [wedding rituals] / DIY gym / listening to the radio / congregate during load-shedding [electricity outage] / getting a better mobile signal.
বাড়ির ছাদ মানে যেন মানুষের জীবনের সমস্ত নাটক এই খানে মঞ্চায়িত হয়, জীবন কিংবা মৃত্যু তার সমস্ত রং রেখা নিয়ে হাজির হয় এই বাড়ির ছাদে (Hillenbrand 2020)। অন্য সমস্ত সামাজিক জায়গার মতোই মানুষের কাজ প্রতিযোগিতা, দর কষাকষির অবস্থানকে র্নিধারন করে। বাড়ির ছাদকে যতবার যতভাবে ব্যবহার করা হয় ঠিক ততবার ততভাবেই নতুন করে কল্পনা করা হয়। বাড়ির ছাদ না অফিসের ছাদ, শহরের ছাদ না গ্রামের বাড়ির ছাদ তার ওপর র্নিভর করে ছাদের গুরুত্ব আলাদা হয়ে যায়। সকাল, দূপুর না রাত এইটা কখন ব্যাহৃত হচ্ছে অথবা কে এটা ব্যাবহার করছে তার ওপর র্নিভর করেও ছাদের গুরুত্ব বদলে যায়। রুথ ভেনিতা তার লিঙ্গীয় গবেষণায় ১৮ এবং ১৯ শতকের শেষের দিকের উ্ততর ভারতের শহর গুলোতে ছাদকে দেখিয়েছেন “নারী অঞ্চল” এর অংশ হিসেবে। এইখানে নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যে লিঙ্গীয় এবং যৌনতার বিধি নিষেধ আছে তাকে তুলনামূলক সহজভাবে অস্বীকার করতে পেরেছে। ছাদ ঘরকন্নার বদ্ধ অনুভূতি থেকে মেয়েদের সাময়িক মুক্তি দিতে পারত, এইখানেই সম্ভব হতো পুরুষের দিকে লজ্জাহীন ভাবে তাকিয়ে থাকা কিংবা প্রেম করার (Vanita 2012; Lal 2013)। হয়ত খুব কম করে হতো তবুও নিষিদ্ধ বন্ধুত্ব কিংবা গোত্র বর্হিভূত প্রেমগুলোও ছাদেই সম্ভব হতো। ছাদমুক্তি ছিলো রাজনীতির ঠিক মাঝামাঝি একটা জায়গা; যেখানে ব্যাক্তি তার ব্যাক্তি জীবন থেকে খানিকটা বেরিয়ে জনজীবনের আধাআধি অংশ হতে পারত। সাধারন মানুষ ছাদকে ব্যবহার করত আর্দশিক ধারনা, চর্চা এবং ক্ষমতা সম্পর্ককে লঙ্গন করার জন্য ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ছাদ বিশেষ ভাবেই ছিলো রাজনৈতিক। ৬০ দশকের শেষের দিকে এবং ৭০ দশকের শুরুর দিকে বিশ্বে যখন স্বৈরাচারি ক্ষমতা, যুদ্ধ এবং পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে অভ্যূত্থান ঘটছে, পাকিস্থানে তখন ছাদ ব্যাবহৃত হয়েছে মৌলানা ভাসানীর ইসলামিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী রাজনীতির স্থান হিসেবে। ভাসানী (১৮৮৬-১৯৭৬) যাকে দক্ষিণ এশিয়ার লাল মওলানা বলা হতো, তিনি ছিলেন একাধারে শ্রমিক নেতা, রাজনীতিবিদ, সুফি পীর, যার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিলো বৃটিশ ইন্ডিয়ার কলোনিয়াল আসামে, এবং ৪৭ এর দেশ বিভাগ হয়ে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্থান স্বাধীন হওয়ার পর পর্যন্ত যেটা স্থায়ী হয়েছিলো। ১৯৫৭ সালে ভাসানী জাতীয় আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন । এই্ পার্টি গড়ার মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্থানের সব প্রদেশ থেকে একই সাথে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা, নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী, ভাসানীর মুরিদ সবাইকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, পুজিঁবাদ বিরোধী এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে একই মঞ্চে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। ১৯৬০ সালে ভাসানীর চিন এবং কিউবা ভ্রমন এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন সমাজতন্ত্রী অংশের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উনি ইসলাম এবং র্মাকসবাদকে একসাথে করে সম্পূর্ণ নতুন একটি চিন্তা হাজির করেন । ইসলামিক সমাজতন্ত্রের পক্ষে প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তীকে একাসাথে করতে থাকেন (উদিদন ২০১৬)। ভাসানীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছিলো বহুমাত্রিক এবং তিনি প্রচলিত রাজনৈতিক নিয়ম কানুন তয়তরিকার সম্পূর্ণ বাইরে বেরিয়ে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন । প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক ঘারানাকে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন নৌকায়, গ্রামের উৎসবে, মসজিদে । এই একই ধারাবাহিকতাই ১৯৭০ সালে ভাসানীর রাজনীতিকে পৌঁছে দিয়েছে বাড়ির ছাদে ।
পশ্চিম পাকিস্থান ভ্রমনকালে ভাসানী এবং তার জাতীয় আওয়ামী পার্টি পাঞ্জাবে বাড়ির ছাদকে পুরো দখল করে নিয়ে ছিলেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে । ছাদে জমায়েত সাধারন মানুষের সাথে তারা সাম্রজ্যবাদ বিরোধী, এফ্রো-এশিয়ান কৃষক এবং শ্রমিক শ্রেনির সংগ্রাম নিযে কথা বলেছেন। তারা কথা বলেছেন ইসলামিক সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে, পাঞ্জাবী এবং র্উদূতে ব্যানার উড়িয়েছেন, শ্লোগান দিয়েছেন
Rooftops are where “human drama occurs” encompassing stories of life and death in all of its colours and shades (Hillenbrand 2020). Like every social space, people’s actions contest, negotiate and produce these locations. The rooftop is reimagined every time it is used, acquiring different significations, depending on where it is (office or home, rural or urban); when it is being used (morning, afternoon, night); and who is using it. Ruth Vanita in her work on gender in late 18th and 19th century North Indian cities describes rooftops as part of a “feminine geography”. Here, women could defy patriarchal norms of gender and sex with fewer risks. Rooftops offered escape from stifling domesticity, the opportunity to stare at men, brazenly disregarding the rules of purdah (seclusion) and engage in queer affairs and romances (Vanita 2012; Lal 2013). To a lesser degrees, some of the forbidden friendships and romances playing out on rooftops might also involve caste or communal violations. The roofscape is an in-between space of politics; where the personal spills out into the semi-public areas of life, and people have used the roofs to transgress and disrupt normative ideas, practices and relationships of power.
South Asian rooftops have also been more explicitly political. In Pakistan, during the late 60’s and early 70’s global uprising against authoritarian regimes, war and capitalism, the rooftops were used for Maulana Bhashani’s revolutionary politics of Islamic Socialism. Bhashani (1886-1976), also known as the ‘Red Maulana of South Asia’ was a peasant and worker leader, politician and Sufi pir (saint), whose career had begun in colonial Assam in British India and continued through partition in 1947 and the creation of Bangladesh from Pakistan’s East Wing in 1971. In 1957, Bhashani founded the National Awami Party, which brought together veterans and leaders of the anti-colonial movements, workers of the banned Communist Party and Bhashani’s murids (religious disciples) from all provinces in Pakistan on a platform of anti-imperialism, anti-capitalism and social justice. In the 1960s, Bhashani’s travels to China and Cuba, and encounters with socialists of all hues from around the world helped him to combine Islam and Marxism in interesting new ways, creating progressive imaginaries and alliances around the politics of Islamic Socialism (Uddin 2016). Bhashani, accustomed to doing politics in a diverse and unusual range of spaces and mobilising constituencies excluded from the formal spheres of politics, at riverboats, village festivals, mosques and shrines, took his politics to the roofs in 1970.
Bhashani and National Awami Party claimed the rooftops of Punjab during his tour of the West Wing of Pakistan. They spoke to the people gathered across roofs about anti-imperialism, Afro-Asian peasant and worker struggles and Islamic Socialist futures. Banners were flown and slogans were shouted in Punjabi and Urdu:
“সমাজতন্ত্র আসবেই”
“ছিনলো জায়গির- জায়গির
ছিনলো
(জমি জিরাত ছিনিয়ে নাও)”
“আধেরোকো লুটেরোকো
মারদো
(জোতদার লুটেরা বিনাশ করো)”
“হামারা নারা ইনকিলাব
(আমাদের শ্লোগান বিপ্লব)”
“ফসল বুনবে যে, খাবার খাবে সে”
“কিষান রাজ আভি হে আভি
(কৃষক রাজ্য আসবেই)”
“ইয়ে আজাদী ঝূটি হে, লাখো
আদমী ভুখা হে”
(যে স্বাধীনতা ভাত দেয় না সেই স্বাধীনতা মিথ্যা)
রিসওয়াত খোরি বন্দ কারো,
ইয়ে হুকমত ছোর দো
(ঘুষ খাওয়া বন্ধ করো নইলে গদি ছেরে দাও)
সরদারি, জায়গিরদারি,
নওকরশাহী র্মূদাবাদ
(সাম্রাজ্যবাদ, জোদ্দারী, আমলাতন্ত্র র্মূদাবাদ)
সূত্র: পুলিশ অ্যাবস্ট্রাক্ট অফ ইন্টেলিজেন্স, পশ্চিম পাকিস্তান, ১৯৭০
Socialism Avay Avay
(Socialism will come!)
Chin Lo Jagiren – Jagiren Chin Lo
(Seize the lands!)
Wadheron ko Luteron Ko Mardo
(Kill the landlords and Looters!)
Humara Nara Inqilab
(Our slogan is revolution!)
Jera Wahway O Hi Kahvay
(He who tills should eat!)
Kisaan Raj Avay Hi Avay
(Peasant kingdom will come!)
Yeh Azaadi Jhooti Hai Laakhon Aadmi Bhooke Hain
(This freedom is a lie, hundreds of thousands are hungry!)
Rishwat Khori Band Karo Ya Hukoomat Chor Do
(Stop bribery or quit this government!)
Sarmayadari, Jagirdari, Naukarshahi Murdabad
(Death to capitalism, landlordism and bureaucracy!)
Source: Police Abstract of Intelligence, West Pakistan, 1970.
বাড়ির ছাদের রাজনীতির একটা বৃহত বৈশ্বিক গল্পও আছে। হারলেম থেকে তেহরান কিংবা চায়না, গনমানুষ ছাদকে ব্যাবহার করেছে রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিরুদ্ধে গণ-মানুষের সামাজিক ক্ষমতাকে যুথবদ্ধ করার জন্য, সংগঠিত করার জন্য, রাষ্ট্রীয় সহিংসতাকে প্রতিহত করার জন্য। ১৯৬৪ সালে ১৫ বছর বয়সী একজন আফ্রিকান আমেরিকান কিশোর জেমস পাওয়েলকে কর্মবিরতিতে থাকা একজন পুলিশ অফিসার হত্যা করেছিলো। যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারলেম রায়ট হয়েছিলো । এই রায়টের সময় ওই কমিউনিটির আফ্রিকান আমেরিকানরা ছাদকে ব্যাবহার করেছিলো স্বশস্ত্র রায়ট পুলিশ থেকে আত্ব রক্ষার জন্য। ফ্রেড শাপিরো এবং জেমস সালিভান তাদের রিপোর্ট করার সময় ঘোষনা করেছিলেন য়ে “হারলেম এর বাড়িগুলোর ছাদ হচ্ছে পুলিশের শত্রু” (Shapiro & Sullivan 1964)। ২০০৯ সালে তেহরানের বিতর্কিত রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের প্রতিবাদে তেহরানের জনগন রাতের আধারে ছাদে উঠে এসে শ্লোগান দিয়েছে “আল্লাহ-হু-আকবার” কিংবা “স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক” (Dibazar 2015)। ছাদ এবং রাতকে তারা ব্যাবহার করেছে তাদের গোপনীয়তার রক্ষক হিসেবে। চিনের প্রিকেরাসে র্নিমান শ্রমিকরা তাদের পাওনা পারিশ্রমিকের দাবীতে তাদেরই তৈরী ভবন এর ছাদ থেকে লেজস ঝুলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করে (Hillenbrand 2020)। প্রতিবাদ এর অংশ হিসেবে বৃষ্টির মতো বোতল ছুরে মারা, উপর থেকে পাথর বা থুতু ছুরে দেয়া, জোড়ে শ্লোগান দেয়া এবং পতাকা বা ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য, জায়গা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হয়েছে বাড়ির ছাদ । রিফিউজি, কারাগারবাসী, আদিবাসী, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শ্রমিক শ্রেণি কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মতো রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠীরাই এই ধরনের প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে ।
বাড়ির ছাদ কেন এই রকম রাজনৈতিক স্থান হিসেবে অভিযুক্ত হলো? উপর থেকে ক্রমাগত এই ধরনের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের ক্ষমতাকেই প্রকাশ করে । ছাদের বিশেষত্বই এরকম যে এইটা প্রতিবাদকারীদের সমাজের ধনিক শ্রেণি এবং দলিত শেণির মাঝে ক্ষমতা সম্পর্ককে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ তৈরী করে দেয়। ছাদ দখল করার মধ্যে দিয়ে যেইটা হয় ক্ষমতা কাঠামোর নীচ তলায় যারা থাকে যাদেরকে এতদিন ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার উপরতলা থেকে নীচে তাকিয়ে দেখত, তারাই এখন ছাদের ওপর থেকে ক্ষমতাবানদের নীচে তাকিয়ে দেখার সুযোগ পায়। জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি যারা এসে দাড়ায় তাদের কাছে রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের, এক চেটিয়া ক্ষমতাতন্ত্রের বিশেষ করে মৃত্যুভয়ের কার্যকারিতা আর থাকে না । বাড়ির ছাদ বিক্ষোভকারীদের একই সাথে অদৃশ্য থাকার এবং দৃশ্যমান হওযার সুযোগ করে দেয়। বিরাট জনসমাগম এরিয়ে চলতে, রাস্তার সংর্কীণতা এরিয়ে যেতে, কিংবা পুলিশের নজর দাড়ি বা নৃশংসতা এরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেহেতু বাড়ির ছাদ একই সময়ে বিক্ষোভকারীদেরও ধারন করে ওই জন্য এইটা রাজনৈতিক স্থান হিসেবে নতুন সম্ভাবনাও তৈরী করে। প্রতিবেশী এবং ব্যাক্তিগত পরিসরে প্রবেশ কারার মধ্যে দিয়ে রাজনিতী আর শুধু পুরুষের দখলে থাকে না, রাজনীতিল চলে যায় গৃহকোনে থাকা নারী, বয়বৃদ্ধ এবং তরুনদের দখলে। ছাদ কেন্দ্রিক রাজনীতি রাজনৈতিক স্থান সম্প্রসারনের মধ্যে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বয়ান তৈরীর, সংহতির এবং নতুন লক্ষ্য র্নিধারনের সম্ভাবনা তৈরী করে। রাজনৈতিক প্রতিবাদ বিল্ডিং থেকে বিল্ডিং হয়ে অস্থায়ী ভাবে, শব্দ হয়ে সমস্ত প্রতিবেশীর মধ্যে ছড়িয়ে পরে এবং এর মধ্যে দিয়ে রাজনীতিবআগের চেয়েও অনেক বেশি জায়গা দখল করতে সক্ষম হয়। বাড়ির ছাদ যেহেতু ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুলিশ বা রাষ্ট্র কেউই শেষ পর্যন্ত রাস্তার দখল নেয়ার মতো করে বাড়ির ছাদের দখল নিতে পারে না ।
Rooftop politics have a wider global story, from Harlem to Tehran and China, people have used these spaces to organise, mobilise and resist the violence and depredations of social power, state and capital. In 1964, the killing of James Powell, a 15-year-old African-American teenager by an off-duty police officer led to the ‘Harlem Riots’, during which rooftops were used by black residents to defend themselves against the mounting escalation of armed police in their communities. Fred Shapiro and James Sullivan, reporting on the riots declared: “The Harlem rooftop is the policeman’s enemy” (Shapiro & Sullivan 1964). In 2009, Tehran residents protesting against the disputed presidential elections used the cover of the night to come out on to rooftops to shout out “Allah-o-Akbar” (God is Great) and “Marg Bar Dictator” (Death to the Dictator) (Dibazar 2015). In China, precarious construction workers hang off the ledges off the roofs of buildings that they had helped to build to secure unpaid wages (Hillenbrand 2020). Rooftops have been optimum spaces to rain down bottles, stones and saliva, shout slogans, and fly banners and flags. The protestors have been from the most dispossessed groups: refugees, prisoners, indigenous people, minority groups, working-class, and the poor.
Why are rooftops such charged political locations? Demonstrations from above simultaneously represent the precarity and power of the protestors. The unique spatiality of the roof allows the protestors to invert the logic and relationship of power between the dispossessed and the elite. By taking to the rooftop, those who are usually “looked down upon” or occupying the “lower rungs” are now the ones looking down on the sites and representatives of power. The state’s monopoly of violence, especially death, no longer has the same potency for those who are choosing to hang between life and death. Rooftops also offer protestors the visibility and invisibility needed in struggles. They are able to avoid the exposure of vast public spaces, narrowness of streets, and the police surveillance and brutality. However, at the same time as it conceals protestors, rooftops opens up new spaces of politics. By entering into neighbourhoods and more personal space, politics is no longer the preserve of men, but belongs to those who also inhabit the domestic spaces – the women, the elderly and the young. Rooftop politics offers the possibility of new political claims, solidarities and visions by enlarging the space of politics. Moreover, rooftops also extend the temporal, spatial and audial range of politics, with protests spreading across buildings and neighbourhoods, occupying more political space than it had ever before. Finally, as part of the private space, police and state cannot claim the roofs in the way they do the streets.
রাষ্ট্র নিজেও অবশ্য বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রিয় বাহিনী দ্বারা এই ছাদ ব্যাবহার করেই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছে। স্নাইপার এবং পুলিশ নিয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ওপর নাজরদারি জারি রেখেছে, গুলি করেছে । ওয়াইজম্যান তার “ইজরাইলী স্থাপনা পেশা” বিষয়ে কাজ করতে যেয়ে দেখিয়েছেন সেনাবাহিনী কিভাবে লাল পাথর দিয়ে বাধানো দেখে স্যাটেলারদের ছাদকে ফিলিস্তিনিদের ছাদ থেকে আলাদা করে এরঙ চিহ্নিত করে রাস্ট্রীয় সন্ত্রাস ছরিয়ে দিতে পেরেছে (Weizman 2012)। ড্রোন, স্যাটেলাইট এবং হেলিকপটার ব্যাবহার করে বিক্ষোভকারীদের উপর আকাশ থেকে নজরদারী বাড়িয়েছে এবং বাড়ির ছাদ তাদের যে নিরাপত্তা দিতে পারত সেইটা সীমিত করেছে। তার ওপর বহুতল ভবন উচু হওয়ায় এবং গরিব ও দলিত শ্রেণি ডরমেটরি শহরে স্থানান্তর করায় ছাদ কেন্দ্রিক বিক্ষোভ এর সুযোগ এবং কার্যকারিতা দুটোই অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে ।
রাস্তায় বিক্ষোভ প্রর্দশণ করলে যেহেতু রাষ্ট্রিয় বাহিনী কাদাঁনে গ্যাস, ব্যাটন এবং লাঠি চার্জ করে, গাড়ি দিয়ে ধাওয়া করে, সহিংস আক্রমন চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয়, রাজনৈতিক প্রয়োজন থেকেই ছাদ, করিডোর এবং ব্যালকনির মতো জায়গাগুলোকে রাজনৈতিক সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে আবিষ্কার করতে হবে । দক্ষিণ এশিয়ার স্বৈরতান্ত্রিক উত্থান, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং সংখ্যালঘু বিরোধী রাজনীতির উত্থানকে চ্যালেঞ্জ করে, দাবী দাওয়া কেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে বের হয়ে এসে প্রগতিশীল রাজনীতি নতুন রাজনৈতিক বয়ান হাজির করতে পারে কিনা তা দেখতে হবে। দক্ষিন এশিয়ার বাড়ির ছাদগুলো আবার বিপ্লবী শ্লোগানে মুখরিত হবে কোন একদিন ।
Yet states have also used rooftops to supress protests, often with excessive force. Snipers and police have been posted on them to spy and shoot at protestors. Weizman in his work on Israel’s architecture of occupation shows how for soldiers, the “red pitched rooftops” of settlers became ways of distinguishing them from Palestinian roofs, and therefore spared state violence (Weizman 2012). Aerial surveillance using drones, satellite and helicopters further limit the protection that rooftops offer to protestors. Moreover, as high-rise towers get taller, and the poor and dispossessed are relocated to dormitory towns, the reach and effectiveness of rooftop protests becomes narrower.
As streets become theatres of state violence, with protestors blinded by teargas, struck violently with sticks and batons, and mowed down with vehicles, the political possibilities of residual spaces – roofs, corridors, and balconies – need to be explored. Rising authoritarianism, communal violence and anti-minority politics in South Asia and beyond demand new conversations on how progressive politics can endure and flourish in the face of these challenges. Can the rooftops of South Asia be once again alive with the sounds of revolution?
References
Fikry, Noha. 2020. ‘Rooftop “Recipes” for Relating: A Commentary on Recipes, Ethnography, and Theory’. Member Voices, Fieldsights. Society for Cultural Anthropology. Accessed 20 October 2020.https://culanth.org/fieldsights/rooftop-recipes-for-relating-a-commentary-on-recipesethnography-and-theory.
Hillenbrand, Margaret. 2020. ‘The Cliffhangers: Suicide Shows and the Aesthetics of Protest in China’. Cultural Politics 16 (2).
Lal, Ruby. 2013. Coming of Age in Nineteenth-Century India: The Girl-Child and the Art of Playfulness. Cambridge, [England]; New York: Cambridge University Press.
Pedram Dibazar. 2015. ‘Leftover Space, Invisibility, and Everyday Life: Rooftops in Iran’. In Global Garbage: Urban Imaginaries of Waste, Excess and Abandonment, edited by Christoph Lindner and Miriam Meissner, 101–16. Routledge Research in Sustainable Urbanism. London: Routledge.
Roggema, Rob. ed. 2017. Food Roofs of Rio de Janeiro: The Pavao-Pavaozinho and Cantagalo Case Study. Cham, Switzerland: Springer.
Shapiro, Fred C., and James W. Sullivan. 1964. Race Riots: New York, 1964. New York: Crowell.
Uddin, Layli. 2016. ‘In The Land of Eternal Eid: Maulana Bhashani and the Political Mobilisation of Peasants and Lower-Class Urban Workers in East Pakistan, c. 1930s-1971.’ England: Royal Holloway, University of London.
Vanita, Ruth. 2012. Gender, Sex, and the City: Urdu Rekhtī Poetry in India, 1780-1870. Literatures and Cultures of the Islamic World. New York: Palgrave Macmillan.
Weizman, Eyal. 2007. Hollow Land: Israel’s Architecture of Occupation. London: Verso.
Featured Image
দেয়ালবদ্ধ লাহোর শহর, ২০১৯, সূত্র: Matt Birkinshaw
Walled City of Lahore, 2019. Source: Matt Birkinshaw
Acknowledgements
Thanks to Matt Birkinshaw, and the editors for their comments on earlier versions of this article. A special thanks to Dilshana Parul for her excellent translation, it would not have been possible without her help.
Disclaimer: Translated into Bengali by Dilshana Parul. Issues journal shall not be responsible for any inaccuracies or errors, both direct and indirect, in the translation. If any questions arise concerning the accuracy of the information presented by the translated version, please refer to the English content of the same.